যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ রক্ষণশীল নেতা এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী চার্লি কার্ক সম্প্রতি ইউটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। মাত্র ২২ বছর বয়সী টাইলার রবিনসনের হাতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ ঘটনা শুধু আমেরিকাকে হতবাক করেনি, বরং দেশটির রাজনৈতিক বিভাজন ও সহিংসতার প্রশ্নটিকেও সামনে নিয়ে এসেছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—চার্লি কার্ক আসলে কীভাবে এতটা প্রভাবশালী হলেন, আর কেনই বা তিনি টার্গেট হলেন?
শিকাগোর সাধারণ তরুণ থেকে জাতীয় পরিচিতি
- জন্ম: ১৯৯৩ সালে শিকাগোর শহরতলি
- বয়স ১৮-তেই প্রথম প্রবন্ধ প্রকাশ, যেখানে তিনি আমেরিকান স্কুলগুলোকে “ভুল বার্তা ছড়ানোর” অভিযোগ তোলেন
- বিল মন্টগোমেরির সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠা করেন টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ (TPUSA)
কলেজ ক্যাম্পাসে রক্ষণশীল আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে তিনি দ্রুত পরিচিতি পান। অনলাইনে চটকদার প্রচারণা ও সোশ্যাল মিডিয়া কৌশল কাজে লাগিয়ে কার্ক তরুণ প্রজন্মের কাছে রক্ষণশীল আন্দোলনের মুখপাত্র হয়ে ওঠেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হয়ে ওঠা
শুরুতে তিনি ট্রাম্পের সমর্থক ছিলেন না। তবে ২০১৬ সালের পর থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক মিত্রদের একজন হয়ে ওঠেন।
- তরুণ রিপাবলিকান ভোটারদের কাছে ট্রাম্পের বার্তা পৌঁছে দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
- ২০২৪ সালের নির্বাচনী বিজয়ে ট্রাম্প প্রকাশ্যে তার অবদানের স্বীকৃতি দেন।
- ট্রাম্প প্রশাসনের নিয়োগ ও নীতিতে তার প্রভাব ছিল সুস্পষ্ট।
কেন তাকে হত্যা করা হলো?
সন্দেহভাজন হামলাকারী টাইলার রবিনসন তদন্তকারীদের জানিয়েছে, তার বিশ্বাস ছিল—কার্ক “ঘৃণা ছড়াচ্ছেন”। সোশ্যাল মিডিয়ায়ও সে অস্ত্র সংগ্রহের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেছিল।
কার্কের উত্তরাধিকার ও প্রভাব
কার্কের মৃত্যুর পর ট্রাম্প তাকে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা “প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম” প্রদানের ঘোষণা দেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও স্বীকার করেছেন, রাজনীতিতে প্রবেশের শুরুতে কার্কই তাকে ট্রাম্পপন্থী নেটওয়ার্কের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।
রক্ষণশীল মহলের অনেকেই মনে করেন—
- কার্ক শুধু নির্বাচনী রাজনীতিতেই নয়, বরং তরুণ প্রজন্মকে সংগঠিত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
- তিনি রিপাবলিকানদের জন্য নতুন ভোটার বেস তৈরি করেছিলেন, যা ভবিষ্যতেও দলের জন্য প্রভাব ফেলবে।
চার্লি কার্কের উত্থান প্রমাণ করে, সরকারি পদে না থেকেও কীভাবে কেউ রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশাল প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তার হত্যাকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সহিংসতার বাস্তবতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
তবে এখনো প্রশ্ন রয়ে যায়—তিনি কি বিভক্ত আমেরিকার শিকার, নাকি তার রাজনৈতিক প্রভাবই তাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে?
0 মন্তব্যসমূহ